মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর নিউজ ডেস্ক :: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক— হাজারো কণ্ঠে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার সম্পন্ন হলো পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। করোনা মহামারির কারণে এবারের হজে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল ফজরের নামাজ আদায় শেষে হজযাত্রীদের মিনা থেকে নিয়ে যাওয়া হয় আরাফাতের ময়দানে। সেখানেই পালিত হয় হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত এ ময়দান প্রকম্পিত হয় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনিতে।
গতকাল দুপুরে আরাফাতে মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেন মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। প্রায় ২০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা মূল খুতবা আরবিতে দেওয়া হয়, তবে আরো ৯ ভাষায় (সংক্ষিপ্ত পরিসরে) অনুবাদ করা হয়, যার মধ্যে বাংলাও ছিল। খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
শায়খ ড. বান্দার বালিলা বলেন, উম্মতের পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। আল্লাহর রহমত থেকে সেই ব্যক্তিই নিরাশ হয় যে পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে।
ড. বান্দার আরো বলেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়, আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায় ও ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসলামে মানবজাতির জন্য এমন বিধি-বিধান রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে সমশ্রেণির মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এটি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য। আমাদের আচার-আচরণ ও ব্যবহারে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে হবে।’
কাবার ইমাম খুতবায় বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা জমিনে ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। কোরআনে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ তাআলার রজ্জুকে শক্তভাবে ধরো এবং মতপার্থক্যে যেও না। পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা সম্পর্ক তৈরি করো। বিদ্বেষ ও শত্রুতা খতম করো।’
আরাফাত ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে হাজিদের নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় আট কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায়। তাঁরা মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে রাতে সেখানেই অবস্থান করেন। শয়তানের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর তাঁরা সংগ্রহ করেন। আজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানের উদ্দেশ্যে সাতটি পাথর মারবেন, দমে শোকর বা কোরবানি ও মাথা মুণ্ডন বা চুল ছেঁটে গোসল করবেন। সেলাইবিহীন দুই টুকরা কাপড়ও বদল করবেন। এরপর স্বাভাবিক পোশাক পরে মিনা থেকে মসজিদুল হারামে গিয়ে কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এ ছাড়া সাফা-মারওয়া সাঈ (সাতবার দৌড়াবেন) করবেন। তাওয়াফ ও সাঈ শেষে তাঁরা আবার মিনায় যাবেন। মিনায় যত দিন থাকবেন, তত দিন তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানের উদ্দেশ্যে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। এভাবেই হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
করোনা মহামারিতে দ্বিতীয় বছরের মতো সীমিত পরিসরে সৌদি আরবে হজ পালন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মাস্ক আর শারীরিক দূরত্বের নিয়মের সঙ্গে এবার রয়েছে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা। এবারের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গত শনিবার। হজের সুযোগ পাওয়া মুসলমানরা গত রবিবার সারা দিন মিনায় কাটিয়েছেন ইবাদত বন্দেগিতে। এরপর গতকাল সম্পন্ন হলো মূল আনুষ্ঠানিকতা।
আধুনিক যুগে গত বছরই প্রথম মহামারির কারণে সৌদি আরবের বাইরে থেকে কেউ মক্কায় এসে হজে যোগ দিতে পারেননি। এবারও বহাল রয়েছে সেই নিয়ম। স্বাস্থ্যবিধি ও হাজিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবার বিশেষ ‘স্মার্ট হজ কার্ড’ চালু করেছে সৌদি আরব। তবে হজে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে বেড়েছে। এবার সৌদি আরবের নাগরিক ও বাসিন্দাদের মধ্য থেকে ১৫০ দেশের ৬০ হাজার জন হজ করতে পারছেন, যাঁরা সবাই পূর্ণ ডোজ টিকা গ্রহণকারী। আর মহামারির শুরুর বছর গতবার নজিরবিহীন বিধি-নিষেধের মধ্যে মাত্র এক হাজার মুসলমান হজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয় বলছে, মহামারির কারণে এ বছরের হজ পালনে স্বাস্থ্য বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। হজযাত্রীদের ২০ জন করে একেকটি দলে ভাগ করা হয়েছে এবং প্রতিটি দলে তাঁদের সঙ্গে আছেন সরকার নিযুক্ত একজন প্রতিনিধি। পরিক্রমার পথ এমনভাবে রাখা হচ্ছে যাতে হজ পালনকারীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে পারেন।
Leave a Reply